মোঃ মাহবুবুল আলম খানঃ
১৯৪৭ সালের ২৮শে সেপ্টেম্বর, বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতার ঘর আলো করে টুঙ্গিপাড়ায় জন্ম হয় বঙ্গবন্ধুর বড় সন্তান শেখ হাসিনার।টুঙ্গিপাড়ায় বাল্যশিক্ষা নেয়া বাংলাদেশের আশার প্রদীপ ১৯৫৪ সালে পরিবারের সাথে ঢাকায় চলে আসেন। ১৯৫৬ সালে তিনি টিকাটুলির নারীশিক্ষা মন্দির বালিকা বিদ্যালয়ে ভর্তি হন।
১৯৬৫ সালে আজিমপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক পাশ করেন। ১৯৬৭ সালে গভর্নমেন্ট ইন্টারমিডিয়েট গার্লস কলেজ(ইডেন কলেজ) থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। শেখ হাসিনা ১৯৭৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি সম্পন্ন করেন।
ছাত্রজীবন থেকেই তিনি রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন। ১৯৬২ সালে আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন । ১৯৬৬ সালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রার্থী হিসেবে ইডেন মহিলা কলেজ ছাত্রসংসদ নির্বাচনে ভিপি নির্বাচিত হন। তিনি এই কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং পরের বছর সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। শেখ হাসিনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের একজন সক্রিয় সদস্য এবং ১৯৭৩ সালে ছাত্রলীগের রোকেয়া হল শাখার সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৬৭ সালের ১৭ই নভেম্বর বিশিষ্ট পরমানু বিজ্ঞানী ডঃ এম. এ ওয়াজেদ মিয়ার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। সাংসারিক জীবনে তিনি ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় ও প্রখ্যাত অটিজম বিশেষজ্ঞ সায়মা ওয়াজেদ পুতুল এর গর্বিত মাতা।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘৃন্য খুনি চক্র শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানাকে ছাড়া পরিবারের সকল সদস্যকে নির্মমভাবে হত্যা করে। স্বামীর চাকুরীসূত্রে পশ্চিম জার্মানিতে অবস্থান করায় বেঁচে যান তাঁরা।
১৯৮১ সালের কাউন্সিলে সর্বসম্মতিক্রমে শেখ হাসিনাকে তাঁর অনুপস্থিতিতেই আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। দীর্ঘ ছয় বছরের নির্বাসিত জীবন শেষ করে অবশেষে বঙ্গবন্ধু কন্যা ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরে আসেন।
১৯৮৬-১৯৮৭ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ স্বৈরশাসক এরশাদের বিরুদ্ধে দুর্বার গণআন্দোলন গড়ে তোলেন। ১৯৮৬ সালে প্রথমবারের মতো বিরোধী দলীয় নেতা নির্বাচিত হন জননেত্রী শেখ হাসিনা । ১৯৯০ সালে গণআন্দোলনের মাধ্যমে এরশাদ সরকারকে ক্ষমতা থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করেন। ১৯৯১ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের তৎকালীন বৃহত্তম বিরোধীদল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন।
১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে খুনি জিয়া ও খন্দকার মোসতাকের জারিকৃত কুখ্যাত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করে জাতির পিতার খুনীদের বিচারের মুখোমুখি করেন এবং পরবর্তী সময়ে স্বাধীনতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করেন।
১৯৯৭ সালের ২ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রামে সুদীর্ঘ ২৫ বছরের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের অবসান ঘটিয়ে ‘ঐতিহাসিক পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি’ করেন শেখ হাসিনা সরকার। উনার বলিষ্ঠ নেতৃত্ব ও দাবির কারণে ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর জাতিসংঘ শিক্ষা,বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা ইউনেসকো ২১ ফেব্রুয়ারীকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে এবং সদস্য দেশগুলো দিবসটি পালন করে থাকে।
২০০১-২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি জামাত জোটের সীমাহীন দুর্নীতি ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করেন এবং তথাকথিত ১/১১’র সেনা সমর্থিত অবৈধ সরকারের জেল, জুলুম উপেক্ষা করে নির্বাচন দিতে বাধ্য করান। ২০০৮ সালে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠনের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা বাংলাদেশে ইতিহাস সৃষ্টি করে একটানা তৃতীয়বারের মতো সরকার প্রধান হিসেবে নির্বাচিত হন।
আন্তর্জাতিক আদালতে মায়ানমার ও ভারতের সাথে সমুদ্র সীমা জয়, ছিটমহল বিনিময়ের মাধ্যমে দীর্ঘ অপেক্ষার ইতিটানা, প্রথমবারের মতো মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ প্রেরণ করা, বিশ্ব মোড়লদের কাছে বাংলাদেশের সক্ষমতার জানান দিয়ে পদ্মা সেতু তৈরির সাহসী ও আত্মপ্রত্যয়ী উদ্যোগ, ঢাকার যানজট নিরসনে মেট্রোরেল ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ, চট্টগ্রামে নদীর তলদেশ দিয়ে বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণ, বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়াতে রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন, জিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ, নারীর ক্ষমতায়ন, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী( বয়স্ক ভাতা,বিধবা ভাতা,মাতৃত্বকালীন ভাতা,মুক্তিযোদ্ধা ভাতাসহ অন্যান্য ভাতা), খাদ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনীতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেন ৷
২০২১ সালে মধ্যম আয়ের দেশ, ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা তথা এসডিজি অর্জন,২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত দেশের মর্যাদা লাভ ও ব-দ্বীপ পরিকল্পনা তথা ডেল্টা প্ল্যান- ২১০০ বাস্তবায়নের আলোকোজ্জ্বল ভবিষ্যতের পথে সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ আজ বিশ্বাস করে যতদিন শেখ হাসিনার হাতে দেশ, পথ হারাবে না বাংলাদেশ। সর্বোপরি বিশ্বের বুকে বাংলাদেশকে মানবিক রাষ্ট্র হিসেবে তুলে ধরে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়া, বৈশ্বিক মহামারী কোভিড-১৯ মোকাবেলায় গৃহীত পদক্ষেপ সহ বহু সাহসী ও দূরদর্শী উদ্যোগে শেখ হাসিনা এখন শুধু বাংলাদেশই না, বিশ্বের কাছেও অনুকরণীয় নেতৃত্ব।
বারবার মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে ফেরা দেশরত্ন শেখ হাসিনা আমাদের আশার বাতিঘর, শ্রেষ্ঠ ভরসা।
শুভ জন্মদিন বঙ্গবন্ধু কন্যা,মানবতার জননী, গনতন্ত্রের মানসকন্যা,বিশ্বনেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা।