তারাশ প্রতিনিধি : তাড়াশ উপজেলার চরহামখুরিয়া গ্রামের দবির উদ্দিন তার নিজ এগার বছর বয়সী বড় মেয়েকে চার বছর ধরে ধর্ষণ করে আসছিল মেয়েটি নিরুপায় হয়ে মুখ বন্ধ করে বাবার অত্যাচার সহ্য করে আসছিল ,বড় মেয়েটি বিয়ের পরে তার পিতার বিকৃত যৌন লালসা থেকে রক্ষা পায়।
তারা দুই বোন। এখন তার যে বোনটি বাড়িতে আছে, সে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। তার বয়সও ১০ কী ১২ই হবে। সেই মেয়েটিকেও নির্মম যৌন নির্যাতন করা ও ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে তার পিতা দোবির উদ্দিনের বিরুদ্ধে।
জানা গেছে, গত কোরবানির ঈদের চার থেকে পাঁচ দিন আগে দোবির উদ্দিন দিনের বেলায় তার ছোট মেয়েকে ধর্ষণ করার জন্য পৈশাচিক যৌন নির্যাতন করতে থাকেন। কিন্ত মেয়েটি ভয়ে ও আতংকে কাঁদতে শুরু করে। তখন তার পিতা তার বড় বোনের স্বামীর মুঠোফোনে কল করে। কল করে বলে দেন যে মেয়েকে সে টানা সারে চার বছর ধর্ষণ করে অন্য ছেলের সাথে বিয়ে দিয়েছেন।
শেষ পর্যন্ত কল রেকর্ড ধরেই প্রকাশ পায় নিজ পিতা কর্তৃক দুই শিশু কন্যাকে পৈশাচিক যৌন নির্যাতন ও বিকৃত যৌন লালসা মেটানোর লোম হর্ষক তথ্য,এদিকে এ ঘটনার জের ধরে দোবির উদ্দিনের পরিবারকে সমাজচ্যুত করে রাখা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন মাগুড়াবিনোদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রভাষক আতিকুল ইসলাম বুলবুল। তিনি আরো বলেন, লোক মুখে এসব কথা শুনেছেন। কিন্তু ব্যস্ততার কারণে ভুক্তভোগীদের খোঁজ খবর ও তাদের সাথে কথা বলা হয়ে ওঠেনি। স্থানীয়রা তাদের সমাজচ্যুত করে রেখেছেন।
রবিবার বিকেলে (১৫ আগষ্ট) সরজমিনে সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার মাগুড়াবিনোদ ইউনিয়নের দোবির উদ্দিনের স্ত্রী সেলিনা খাতুন, দোবির উদ্দিনের দুই মেয়ে, দোবির উদ্দিনের বড় মেয়ের স্বামী শাজাহান আলী, দোবির উদ্দিনের পিতা আব্দুল খালেক, মাগুড়াবিনোদ ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নং চর হামকুড়িয়া ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য বেলায়েত হোসেনসহ ঐ গ্রামের অনেকের সাথে এ বিষয়ে কথা হয়।
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে দোবির উদ্দিনের বড় মেয়ে বলেন, আনুমানিক ১১ বছর বয়স থেকে তার পিতা তাকে ধর্ষণ করতে শুরু করে। আর এসব কথা কাউকে বলে দিলে তাকে প্রাণে মেরে ফেলার ভয় দেখাতো। মেয়েটিকে ও বোঝানো হতো যে বিয়ের আগে এসব শিখতে হয়, নয়তো স্বামীর বাড়িতে খুব কষ্ট হবে। কী সঠিক আর কোনটা বেঠিক অসহায় মেয়েটি তা বুঝতে পারতো না। প্রাণ ভয়ে কাউকে কিছু না বলে অধিকাংশ সময় একদম একা চুপচাপ থাকতো।
দোবির উদ্দিনের বড় মেয়ে আরো বলেন, তার পিতার বিকৃত যৌন লালসার শিকার হয়ে সে একবার সন্তান ধারন করেন। তারপর তার বাবা তাদের গ্রামের আজাজুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তির কাছে নিয়ে যায়। তিনি তখন ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করতেন। তার বাবা আজাজুলের কাছে বলেন, আমার মেয়ে একটা ছেলের সাথে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে মা হতে চলেছে। কিন্তু এসব জানাজানি হলে মান সন্মান কিছুই থাকবেনা। আমার মেয়ের বিয়ে হবেনা। তখন মানবিক দিক বিবেচনা করে আজাজুল কোন এক ক্লিনিকে নিয়ে তার গর্ভপাত করে দেন। এসব কথা বলতে বলতে মেয়েটি অঝোরে কাঁদতেছিলো। এক পর্যায়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে।
দোবির উদ্দিনের বড় মেয়ের স্বামী শাজাহান আলী বলেন, আমার মুঠোফোনে অটো রেকর্ড চালু করা আছে, আমার শুশুর সেটা জানতেননা। আমার স্ত্রী সংসার ভেঙে যাওয়ার ভয়ে কখনও নিজে থেকে আমাকে কিছুই বলেনি। তাছাড়া বিয়ের আগে যাই ঘটুক সেটা আমার স্ত্রীর সাথে অন্যায় করা হয়েছে। আমি কল রের্কড শোনার পর আমার স্ত্রী সব খুলে বলেছেন। ওর কোনো দোষ নেই। ও ভাগ্যের নির্মম পরিহাসের শিকার মাত্র। বরং তার দুঃথ ও কষ্টের কথা শুনে আমি নিজের চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি।
এদিকে দোবির উদ্দিনের ছোট মেয়ের সাথে তার বাবা এমন পৈশাচিক আচরণ করার পর থেকে সে শুধু কেঁদে চলেছে। ধর্ষণ করা না হলেও তাকে যে নির্মম যৌন নির্যাতন করা হয়েছে, মেয়েটির কথায় ও আচরণে তা সুষ্পষ্ট। মেয়েটি বলে, এসব কথা কাউকে বলে দিলে তার পিতা তাকে হাঁসুয়া দিয়ে জবাই করার ভয় দেখিয়েছে।
দোবির উদ্দিনের স্ত্রী সেলিনা খাতুন বলেন, গ্রামের একটি পুকুর পাড়ে ফাঁকা জায়গায় তাদের বসতঘর। অভাব অনটনের সংসার। আমি দিন মজুরের কাজ করতে গেলে বা কোন কারণে বাড়িতে না থাকলে তার স্বামী তার দুই মেয়ের সাথে ওসব করতেন, আমি জানতাম না। মেয়েরা কখনও আমাকে জানায়নি।
দবির উদ্দিনের পিতা আব্দুল খালেক (৬৩) বলেন, এ ঘটনা জানাজানি হলে তার বড় নাতনি (দোবির উদ্দিনের বড় মেয়ে) আমার কাছে বিচারের দাবি করে। কিন্তু আমার ছেলে দিন মজুরের কাজে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে পালিয়েছে।
মাগুড়াবিনোদ ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নং চর হামকুড়িয়া ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য বেলায়েত হোসেন বলেন, এহেন ঘটনার কারণে আমরা বাবা’রা সন্তানের কাছে লজ্জায় পড়েছি। তিনি আইন অনুযায়ি অপরাধীর সর্বোচ্চ সাজার দাবি তুলেছেন। তিনি আরো বলেন, গ্রামবাসীর মধ্যে চরম আক্রোস ও উত্তেজনা বিরাজ করছে। তারা দোবির উদ্দিনকে পেলে বেধরক মারধর করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে তাড়াশ থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ফজলে আশিক বলেন, এ ঘটনার অভিযোগ নিয়ে এখনও কেউ থানায় আসেনি।