মোঃ মাহবুবুল আলম খানঃ
পান বাংলাদেশের অন্যতম অর্থকারী ফসল। আবহাওয় অনুকূলে থাকায় অনান্য বছরের তুলনায়
চলিত মৌসুমে পটুয়াখালীর গলাচিপায় পানের বাম্পার ফলন হয়েছে। একাধিক কৃষকের
সাথে কথাবলে জানাযায়, সারা বছর ধরে পানের ফলন হলেও বর্ষা মৌসুমে পানের বেশি ফলন
হয়। অল্প পুঁজিতে নিয়মিত শ্রম ও পরিচর্যার ফলে পান চাষে অধিক লাভবান হওয়া যায়।
পান বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা হয়। অনান্য ফলসলের মত পান চাষিদের
নগদ অর্থ দেয়। বাংলাদেশের অধিকাংশ জেলায় কিছুনা কিছু পান চায় হয়। তবে জলবায়ুর
প্রভাব অনুযায়ী দেশের বরিশাল, চট্রগ্রাম, রাজশাহী, বগুরা, সিলেট, খুলনা, যশোর,
জামালপুর, ফরিদপুর ও ময়মনসিংহ অঞ্চল পান চাষের জন্য বেশি উপযোগি ।
পানের অনেক গুনবলি মানবদেহে এন্টিসেপটিক হিসেবে কাজ করে। খাদ্য হজমে সহায্য
করে, যৌন শক্তি বাড়ায়, গ্যাস্ট্রিক-আলসার, চর্মরোগ দূর করে, মুখের দূর্গন্ধ দূরসহ
দঁাতের উপকার করে, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ ও ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায় বলে গবেষণায়
জানা যায়।
মালয়েশিয়া ও ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পানের বিস্তার ঘটে। পান শব্দটি অট্রিক ভাষা
থেকে উৎপত্তি। সাংস্কৃতে এটি পর্ণ বা তাম্বুল হিসেবে পরিচিত। পান পরিবারভূক্ত এক
প্রকার গুল্মজাতীয় গাছের পাতা। আর্য এবং আরবগণ পানকে তাম্বুল নামে অভিহিত করত।
নিশ্বাসকে সুরভিত করা এবং ঠোট জিহবাকে লাল করার জন্য মানুষ পান খেয়ে থাকে।
পানে অবশ্য কিছুটা মাদকতার আনন্দও বিদ্যমান। প্রধানত দক্ষিণ এশিয়া, উপসাগরীয়
অঞ্চলের দেশসমূহ, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও প্রাশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের মানুষের কাছে
পানের খুব কদর রয়েছে। বিভিন্ন উৎসব, পূজা ও পুণ্যাহে, সামাজিক রীতি, ভদ্রতা ও
আচার-আচরণের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে এবং ঐতিহ্যগতভাবে বাংলাদেশে পানের
ব্যবহার চলে আসছে। আনুষ্ঠানাদিতে পান পরিবেশন দ্বারা প্রস্থানের সময়কে ইঙ্গিত করা
হয়। প্রাচীন অভিজাত জনগোষ্ঠীর মাঝে পান তৈরি এবং তা সুন্দরভাবে পানদানিতে
সাজানো লোকজ শিল্প হিসেবে স্বীকৃতি পেত।
উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা মো.দেলোয়ার হোসেন বলেন, বর্ষার শেষ দিকে অঙ্গজ
পদ্ধতিতে পানের বংশবিস্তার হয়ে থাকে। পান গাছের কান্ডের ছোট ছোট টুকরায় কেটে
চারা তৈরি করতে হয়। প্রতিটি চারা লম্বায় ২৫-৩০ সেমি এবং তাতে ৩-৫টি গঁাইট
থাকা আবশ্যক। সাধারণত দুইটি গাঁইট মাটির নিচে এবং একটি বা অধিক গঁাইট
মাটির উপরে রাখতে হয়। মাতৃ গুনাগুণ বজায় রাখার জন্য অঙ্গজ পদ্ধতিতে অর্থাৎ কাটিং এর
মাধ্যমে বংশ বিস্তার করা হয়।
চিকনিকান্দি ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড পানখালী গ্রামের পান চাষি মো. শহিদুল
হাওলাদার বলেন, ৩৪শতক জমিতে বরজের মাধ্যমে পানের চাষ করেছি, তাতে প্রায় ১লাখ
৮০হাজার টাকা খরচ হয়েছে। পানের বাম্পার ফলন হলেও বাজারে দাম কম থাকায় লোকসান
হওয়ার আশংকা রয়েছে। বাজার ভালো হলে পান চাষ করে সবাই লাভবান হতে পারতাম। স্থানীয়
পান চাষিরা বলেন, পানের ন্যায্য বাজার মূল্য ও সরকারি সহায়তা না পাওয়ায় তারা আর্থিক
ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছেন।উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরজু আক্তার বলেন, গলাচিপা উপজেলায় পান চাষ দিন দিন
জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এ বছর উপজেলায় প্রায় ৩৫ হেক্টর জমিতে পান চাষ করা হয়েছে।
আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় রোগ বালাইয়ের আক্রমণ কম হয়েছে। তাই উপজেলায় পানের
ফলন অধিক হয়েছে।