ডেস্ক রিপোর্ট : প্রায় তিন হাজার বছরের ইতিহাস ঐতিহ্যের ধারক-বাহক এর মাটি, প্রকৃতি; আকাশ-বাতাস। নানা স্থানে ছড়িয়ে রয়েছে ভারতবর্ষের প্রাচীন ইতিহাস খ্যাত বিরাট রাজার রাজ মহলসহ বারো জমিদারের ভগ্ন প্রাসাদ, পীর-আউলিয়ার মাজার এবং প্রায় ৩ হাজার বছরের প্রাচীন বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী স্থাপনার স্মৃতি-চিহ্ন। মুক্তিযুদ্ধসহ নানা আন্দোলন সংগ্রামের উর্বর কীর্তিভূমি রায়গঞ্জ। সিরাজগঞ্জ জেলার প্রাচীন জনপদ রায়গঞ্জ। শস্য-শ্যামল রায়গঞ্জ খাদ্যশস্য উতপাদন উদ্বৃত্ত এলাকা। সাহিত্য-সংস্কৃতি ও রাজনীতিতে এমাটির সন্তানেরা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কীর্তিমান।
রায়গঞ্জের নামকরণঃ অধিকাংশ ঐতিহাসিকদের মতে প্রাচীন ও প্রতাপশালী জমিদার হরিদাস গুহ রায়ঠাকুরের নাম অনুসারে এই এলাকার নাম করণ করা হয় রায়গঞ্জ। পুরাকালে এ অঞ্চলে হিন্দু জমিদারদের ছিল অত্যধিক প্রভাব। ফলে এলাকার অধিকাংশ গ্রাম মহল¬ার নাম হয়েছিল হিন্দুদের দেব-দেবীর নামানুসারে। জমিদারদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন অত্যাচারী ও মুসলিম বিদ্বেষী। একারণে এই এলাকায় মহান ইসলাম প্রচারের জন্য আগত সাধক মহাপুরুষদের সাথে প্রভাবশালী অত্যাচারী জমিদারদের লড়াই সংগ্রামের অনেক ঘটনা ঘটে। এসব কাহিনী এখনো এলাকাবাসীর মুখে মুখে। উপজেলার ধামাইনগর ইউনিয়নের ক্ষীরিতলা নামক স্থানে বিরাট রাজার পোড়ো রাজমহল অবস্থিত। ক্ষীরিতলার নামকরণ বিষয়ে অনুসন্ধানে জানাযায় বিরাট রাজার সংগ্রহীত ৪টি দুর্লভ ক্ষীরিগাছ ছিল। এর একটি ক্ষীরিগাছ ছিল বিরাট নগরে (বর্তমান ক্ষীরিতলায়) রাজ প্রসাদের সামনে।
অবস্থানঃ সিরাজগঞ্জ জেলার প্রায় ৩০.৫৯ কিঃ মিঃ পশ্চিমে অবস্থিত তিস্তা নদীর অন্তরবাহিত নদী সমূহ- বাঙ্গালী (ফুলজোড়), ইছামতি ও করতোয়া নদী বাহিত পলির আস্তরণে গড়ে ওঠা মৃত্তিকা ও প্রাচীন গৌরবর্ণের মাটিতে অবস্থিত একটি পুরাতন থানা রায়গঞ্জ। ১৮৪০ খৃষ্টাব্দে প্রথম বগুড়া জেলার থানা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮৪০ সালের ৯ জুন হতে ১৮৫৭ সালের ১৩ জানুয়ারী পর্যন্ত তা বগুড়া জেলার অর্ন্তভূক্ত ছিল। ১৮৫৭ খৃষ্টাব্দের ১৫ জানুয়ারী রায়গঞ্জ থানা বৃহত্তর পাবনা জেলার সিরাজগঞ্জ মহুকুমার অন্তর্ভূক্ত হয়। এর আয়তন ২৬৭.৮৩ বর্গ কিঃমিঃ। ইউনিয়ন ৯টি, গ্রাম ২৫৭টি। জনসংখ্যা প্রায় ৩ লাখ ৬৬ হাজার। ৮০’র দশকে দেশের অন্যান্য থানার সঙ্গে রায়গঞ্জ থানাও উপজেলায় পরিণত হয়। এই উপজেলার উত্তরাংশ অপেক্ষাকৃত উচু ও দক্ষিণ অঞ্চল নিম্নভূমি। এককালে রায়গঞ্জ কাপড়ের ব্যবসার জন্য প্রসিদ্ধ ছিল। একারণে কাপড়িয়া রায়গঞ্জ নামেও ছিল এর খ্যাতি। রায়গঞ্জের অংশ বিশেষ নিয়ে পরে (১৯১৩খ্রীঃ) তাড়াশ থানা প্রতিষ্ঠিত হয়। এখানে ইংরেজ, ফরাসি, ওলন্দাজ বণিকগণ বস্ত্র ব্যবসার্থে আগমণ করতেন। এখানকার অধিকাংশ লোক চরকায় সূতা কেটে কার্পাস ও পাটবস্ত্র তৈরি করতো। কোম্পানীর কর্মচারীরা টাকা দাদন দিয়ে তাঁতের কাপড় তৈরি করে নিতেন। রায়গঞ্জের রপতানীযোগ্য পণ্য হচ্ছে, গুড়, ধান, পাট, সরিষা, শাক-সবজি, শীতলপাটি, তাঁতের ধুতি, শাড়ি, লুঙ্গি, গামছা, বাঁশ বেতের তৈরি সামগ্রী ও চামড়া।